রাজগঞ্জ ব্লকের শিকারপুর চা বাগানে 50 শতাংশ শ্রমিক দিয়ে চা পাতা তোলার কাজ শুরু হলো।
বেলাকোবা 13 মে : সোমবার রাজ্য সরকারের 50 শতাংশ শ্রমিক দিয়ে চা শিল্পে কাজ করানোর অনুমতি অনুসারে মঙ্গলবার থেকে উত্তরবঙ্গের চা শিল্পে নির্দেশমতো শ্রমিক নিয়োগ করে চা বাগানের চা পাতা তোলার কাজ শুরু হল।
এই প্রসঙ্গে চা শিল্পের মালিকরা খুশি হলেও বাগান পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বাগানের ম্যানেজার এবং চা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী শ্রমিক সংগঠনগুলি খুশি নন।তারা চান চা উৎপাদনকারী অন্যান্য রাজ্য যেখানে 100% অনুমতি দিয়ে কাজ করানোর ছারপত্র দিয়েছেন সেক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের চা শিল্প ও শ্রমিকদের বাঁচাতে গেলে এখনই 100% শ্রমিক নিযুক্তির অনুমতি দেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
এ সম্পর্কে শিকারপুর চা বাগানের অভিজ্ঞ ম্যানেজার বলেন ফিফটি পার্সেন্ট দিয়ে বাগানের ফিফটি পার্সেন্ট কাজ হবে। লকডাউন সময় কালে ইতিপূর্বে 5% ,15, 25শতাংশ দিয়ে তারা চা গাছের পরিচর্যার কাজে অধিক শ্রমিক নিযুক্ত করেছেন। লকডাউন পিরিয়ডের সময় মত গাছের পাতা না তোলার কারণে যেমন গাছের পাতাকে ছাটা হওয়াতে প্রথম ফ্লাশের উৎপাদন দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।এই মাসেই কুড়ি তারিখের ভিতরে শুরু হয়ে যাচ্ছে সেকেন্ড ফ্লাশ। ইতিপূর্বে 25% শ্রমিকের ভিতর অধিকাংশ শ্রমিককে গাছে খাদ্য হিসাবে সার প্রয়োগএবং জঙ্গল পরিষ্কারের কাজ করানো হয়েছে সেকেন্ড ফ্লাশেরজন্য।এখনই সেকেন্ড ফ্লাশের পাতা আসা শুরু করেছে ।চা শিল্পের অধিকাংশ চা-বাগানে উৎকৃষ্ট মানের চা তৈরি করার ক্ষেত্রে চা পাতার7-8দিনের রাউন্ড মেন্টেন করতে স্থায়ী শ্রমিক ছাড়াও অস্থায়ী শ্রমিক নিযুক্ত করতে হয়। সেক্ষেত্রে 50 পার্সেন্ট শ্রমিক নিযুক্তিতে চা বাগানে 50 পার্সেন্ট কাজ হবে 100% নয়।তিনি আরো বলেন, ডুয়ার্সে ,2019 থেকে 2020 তে মার্চ থেকে এপ্রিল মোট 48.33 শতাংশ কম চা উৎপাদন হয়েছে। তার বাগানে 53 হাজার তৈরি চা উৎপাদন হয়েছে।
ডুয়ার্সের কাঁঠালদুরা চা বাগানের ম্যানেজার প্রিয়ব্রত ভদ্র একই বক্তব্য রেখেছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের আই এন টি টি ইউ সি অনুমোদিত তরাই ডুয়ার্স প্লান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নএর সভাপতি নকল সোনার বলেন,প্রতিবেশী চা উৎপাদনকারী রাজ্যগুলি 100% শ্রমিক নিযুক্তির অনুমতি দিয়ে শিল্পের কাজ করাচ্ছেন এই করোনা ভাইরাস সময় কালে। চা বাগানে করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের খবর নেই সেক্ষেত্রে চা শিল্প এবং শ্রমিকদের বাঁচাতে 100 পার্সেন্ট শ্রমিকদিয়ে সোশ্যাল ডিস্টেন্সি ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা করে কাজ করানোর অনুমতি দেওয়া একান্ত দরকার।
ইনটেক অনুমোদিত এন ইউ পি ডাবলুর সাধারণ সম্পাদক মনি কুমার ডার্নাল বলেন,বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু ও আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সকলেই বলছেন ,করোনা কে নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে । চা উৎপাদনকারী রাজ্য আসাম ত্রিপুরা কেরল তামিলনাড়ু প্রমুখ রাজ্যে 100% শ্রমিক দিয়ে চা শিল্প যদি চলতে পারে উত্তরবঙ্গে কেন চলবে না। 100 পার্সেন্ট না হওয়ার কারণে শ্রমিকরা তাদের সাপ্তাহিক6 দিনের কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চা শিল্প এমন একটি শিল্প সময়ের সাথে সব কাজ করানা গেলে উৎকৃষ্ট মানের চা উৎপাদন করা সম্ভব নয়।সুতরাং কালবিলম্ব না করে এখনই 100 পার্সেন্ট দিয়ে চা শিল্পে কাজ করানোর অনুমতি দেওয়া হোক।
ইউ টি ইউ সি অনুমোদিত ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি গোপাল প্রধান বলেন,চাশিল্পে শ্রমিকদের বেতন অন্যান্য শিল্পের থেকে কম । তাদের দৈনিক হাজিরা 176 টাকা লকডাউন পিরিয়ডে শ্রমিকরা তাদের বেতন পাননি। শিল্পে মিনিমাম ওয়েজেস দাবি এখনো মঞ্জুর হয়নি এর মধ্যেই এই মাস থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে সেকেন্ড ফ্লাশ।এই সময় স্থায়ী শ্রমিক ছাড়াও অতিরিক্ত অস্থায়ী শ্রমিক নিযুক্ত করা হয় গুণ গতমানের চা উৎপাদনের জন্য। ফিফটি পার্সেন্ট শ্রমিক নিযুক্তিতে, ফিফটি পার্সেন্ট স্থায়ী শ্রমিক সেইসাথে আরো 15 থেকে 20 পার্সেন্ট অস্থায়ী শ্রমিক এই মাসেই তারা কাজ হারাবেন। সুতরাং চা শিল্পের পিছিয়ে পড়া চা-শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে অবিলম্বে 100% শ্রমিক নিযুক্ত নির্দেশ দেওয়া উচিত সেই সাথে চা শ্রমিকদের আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা উচিত রাজ্য সরকারের।