কালের করাল গ্রাসে অস্তমিত পরিত্যক্ত সুপ্রাচীন বেলাকোবার জম পুকুর ।
বেলাকোবা ,14 মার্চ: গ্রামীণ এলাকায় একটি জলাশয় স্থানীয় মানুষের বহুবিধ প্রয়োজন মেটায় তেমনি এই জলাশয় কে কেন্দ্র করে সেই জনপদ বহু ধারায় ক্রমবিকাশ হয়ে ওঠে। সুপ্রাচীন বেলাকোবা জম পুকুর সেরকমই এক বর্তমান জৌলুসহীন গৌরবান্বিত জলাশয়। প্রবীণ শিক্ষক স্বদেশ কুমার ভৌমিক জানালেন,বর্তমান জম পুকুর যেখানে আছে সেখানে আজ থেকে 200- 300 বছর আগেই ত্রিস্রোতা বা তিস্তা নদী বয়ে যেত। সমকালীন ব্রিটিশ শাসনকালে দেবী চৌধুরানী এখান দিয়ে বজরা নিয়ে যাতায়াত করতেন। কালের করাল গ্রাসে হয়তোবা কোন বন্যা হয়ে নদীর মুখ দক্ষিণ মুখী হয়ে ঘুরে দূরে সরে যায়। ফলে এই স্থানে জলের আধিক্য কমে গিয়ে ছোট ঝরায় পরিণত হয়। সেটিও ক্রমেই অন্তঃসলিলা হয়ে জলাশয় বা পুকুরের আকার নেয়। পুকুরপাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা কাজল সরকার বললেন, আমরা ছোট থেকে শুনে এসেছি এই এলাকায় কারোর বিয়ে বা কোন অনুষ্ঠান হলে অনুষ্ঠান বাড়ির মালিক পান- সুপারি হাতে নিয়ে বাসন-কোসন, মিষ্টি চাল ডাল ইত্যাদি অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য প্রার্থনা করলে তাই পরের দিন পুকুরপাড়ে ভেসে উঠতো। অনুষ্ঠান শেষে সেই বাসন-কোসন আবার ফিরিয়ে দিতে হতো। পুকুর নিয়ে এমন সব ঐশ্বরিক মিথ ও পাওয়া যায়।। প্রবীণ ক্রীড়াবিদ সুবোধ রায় জানান, এই পুকুরে অনেক বার সাঁতার প্রতিযোগিতা হয়েছে, নৌকা বিহারের ব্যবস্থাও ছিল, কিছু বছর আগে পর্যন্ত এখানে দূর্গাপুজা এবং কালী পূজার সময় যথেষ্ট ধুমধামে সাথে প্রতিমা বিসর্জন করা হতো । যে জমিতে পুকুর টি রয়েছে তার বংশধর কামাল হাসান জানান, প্রথমে এই পুকুরটি তাদেরই বংশধর এরশাদ আলী আহমেদ এর হাতে আসে তারপরে কামালবাবু র ঠাকুরদা আতাহার আলী আহমেদ এর মালিকানাধীন হয়। এই আতাহার আলী ১৯৬০ সালে তৎকালীন এলাকার বড়বাবু লক্ষীকান্ত চক্রবর্তীর কাছে আর্থিক দায় পড়ে বিক্রি করেন। তখন লক্ষীকান্ত বাবু সরকারি নিয়ম মত জেলা ট্রাংক ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের অধীনে সরকারিভাবে নিবন্ধীকরণ করান। কিছু বছর পরে হাত বদল হয়ে আবার কামালবাবু দের হাতে পুকুর টির মালিকানা চলে আসে। বেলাকোবা কো-অপারেটিভ মার্কেটিং সোসাইটির কাছে জানা যায়,১৯৭৬ সালে কামাল হাসান দের পরিবারের কাছ থেকে বেলাকোবা কো-অপারেটিভ সরকারিভাবে অধিগ্রহণ করে। বর্তমান কো-অপারেটিভের অধীনেই পুকুরটি আছে । বর্তমান প্রায় তিন বিঘার উপরে জায়গা নিয়ে অবস্থিত পুকুরটি চারিদিকে আশপাশ থেকে বেদখল হয়ে যাচ্ছে, পুকুরটি বেলাকোবা বাজারের কাছে হাওয়ায় বাজারের নিত্য আবর্জনা পুকুরের পাশেই রাখা হচ্ছে, সকাল-সন্ধ্যায় অনেক মানুষই এখানে বিনা অবলীলায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে যাচ্ছেন, বহুদিন পুকুর সংস্কার হয়নি, মাঝি পুকুরটিতে সরকারি ইজারা দিয়ে মাছ চাষের ব্যবস্থা করা হলেও এখন তা অমিল। আশপাশ থেকে ক্রমশ মজে গিয়ে তার কৌলিন্য হারিয়ে ফেলতে চলেছে। এমন শতাব্দীপ্রাচীন জম পুকুরকে হেরিটেজ তকমা দেওয়া উচিত বলে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করছেন । যম পুকুরের পাড় বাঁধিয়ে সৌন্দর্যায়নের ব্যবস্থা করলে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে দাঁড়াতো। অথচ প্রশাসনের কোন নজর নেই। কর্তৃপক্ষের বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার জম্ পুকুর। বেলাকোবা কো-অপারেটিভ মার্কেটিং সোসাইটির ম্যানেজার অলক দেবনাথ জানান, জম পুকুরের সৌন্দর্যায়নের জন্য ,সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন তা অনুমোদনের অপেক্ষায়। এখন দেখা যাক কবে ঐতিহ্যবাহী জম পুকুর প্রশাসনের নজরে আসে তারই অপেক্ষা ।পবিত্র রায়। সংবাদদাতা, বেলাকোবা।